বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে নতুন পরিবর্তনের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। শেয়ারের দরপতন রোধে দীর্ঘদিন ধরে আরোপিত ফ্লোর প্রাইস এবং ৩ শতাংশ সীমা উঠিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাজারের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পরিবর্তন আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
বুধবার অনুষ্ঠিত বিএসইসি'র এক সভায় খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি, বিএসআরএম লিমিটেড এবং মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএসইসি জানিয়েছে, দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে লেনদেন শুরুর আগে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
ফ্লোর প্রাইস হলো এক ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা, যা শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করে দেয়। কোনো শেয়ারের দাম নির্ধারিত ফ্লোর প্রাইসের নিচে নামতে পারে না, যার ফলে শেয়ারের পতন রোধ করা যায়। শেয়ারবাজারের মন্দা বা টানা পতনের সময় এই ধরনের ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়। তবে, এটি দীর্ঘমেয়াদে বাজারের গতিশীলতা হ্রাস করতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় প্রভাব ফেলতে পারে।
দরপতনের ৩ শতাংশ সীমা তুলে নেওয়া
ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পাশাপাশি শেয়ারের দরপতনের ক্ষেত্রেও বড় পরিবর্তন আসছে। বিএসইসি ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল শেয়ারের দাম কমার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সীমা আরোপ করেছিল। তবে, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল থেকে এই সীমাও আর থাকছে না। আগের নিয়মে, কোনো কোম্পানির শেয়ার এক দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারবে। বিএসইসি'র মতে, এই পদক্ষেপ বাজারে স্বাভাবিক লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়াবে।
বাজারে স্থবিরতার কারণ এবং এর প্রতিকার
২০২০ সালের শেয়ারবাজারের পতনের পর থেকে বিএসইসি বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজারকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ফ্লোর প্রাইস আরোপ। সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৮ জুলাই বিএসইসি সমস্ত শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে। এই পদক্ষেপের ফলে বাজারে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়, এবং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর একটি বড় অংশের শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে যায়। এতে দেড় বছর ধরে অনেক কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়।
ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার: পটভূমি ও বাজারের চাহিদা
বিনিয়োগকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিএসইসি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে কয়েক দফায় ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার শুরু করে। বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিএসইসি'র কর্মকর্তারা মনে করছেন, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের ফলে বাজারের কার্যকরী গতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে এবং বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনাবেচায় স্বাধীনতা পাবেন।
বেক্সিমকো লিমিটেড ও ইসলামী ব্যাংকের ফ্লোর প্রাইস বহাল
এদিকে, বেক্সিমকো লিমিটেড ও ইসলামী ব্যাংকের ফ্লোর প্রাইস বহাল রয়েছে। বিএসইসি জানিয়েছে, এই দুটি কোম্পানির সঙ্গে আরও কিছু বিষয় জড়িত রয়েছে, যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাদের ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হবে না। এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, কোম্পানিগুলোর নির্দিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে এবং তা সমাধান হওয়ার পরেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
ফ্লোর প্রাইস ও দরপতনের সীমা তুলে নেওয়ার ফলে বাজারে নতুন গতিশীলতা আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিএসইসি'র এই পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজারকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলবে বলে ধারণা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। অনেকেই আশা করছেন, বাজারে লেনদেনের পরিমাণ বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়বে। এটি বাজারের সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য সহায়ক হতে পারে।
তবে, এই পদক্ষেপের ফলাফল পর্যালোচনা করা জরুরি হবে। বাজারে নতুন করে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এবং বিনিয়োগকারীরা কেমন সাড়া দেন, তা আগামী সপ্তাহগুলিতে বোঝা যাবে। বিএসইসি, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে এবং বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে আরও পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত রয়েছে।
মোটের ওপর, শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলো বাজারের জন্য একটি নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে এবং শেয়ারবাজারের পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
মুক্ত প্রকাশ
প্রতিবেদন: সম্পাদকীয় বিভাগ
0 মন্তব্যসমূহ