ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান সংঘাত ইতিহাসের এক দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল সংঘর্ষ, যা ক্রমাগত মানবিক সংকট সৃষ্টি করে চলেছে। এই সংঘাত মূলত রাজনৈতিক, জাতিগত এবং ধর্মীয় পার্থক্যের ফলে উদ্ভূত হলেও এটি দীর্ঘদিন ধরে চলমান দখলদারিত্ব, বর্ণবাদ, এবং সামরিক আগ্রাসনের ফলেও গভীরতর হয়েছে।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই অঞ্চলটি যুদ্ধ, সহিংসতা এবং অস্থিরতার মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বারবার গাজা, পশ্চিম তীর, এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি অঞ্চলে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে আসছে, যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ।
২০২৪ সালের গ্রীষ্মে, ইসরায়েলি বাহিনী আবারও গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়েছে। ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযানকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে 'আমানবিক যুদ্ধ' হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। গাজায় বিমান হামলা, ট্যাংক এবং ড্রোনের ব্যবহার করে ইসরায়েলি বাহিনী ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, যেখানে স্কুল, হাসপাতাল, এবং সাধারণ জনগণের ঘরবাড়ি পর্যন্ত ধ্বংস করা হয়েছে।
এই সংঘাতের ফলে ফিলিস্তিনি জনগণ গভীর মানবিক সংকটে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে, বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে, এবং মৌলিক জীবনযাত্রার চাহিদা মেটাতে তারা মারাত্মকভাবে সংগ্রাম করছে। গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, এবং খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহও মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোও কঠিন হয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই যুদ্ধকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইসরায়েলকে এই আক্রমণ বন্ধ করার জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু ইসরায়েলি সরকার নিজস্ব নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে এই অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনও বেগবান হয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন সংগঠন ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের এই নতুন অধ্যায় প্রমাণ করে, যে কোনো সামরিক সমাধানই এই সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হতে পারে না। রাজনৈতিক সমঝোতা এবং মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে এই সমস্যার সমাধানই শেষ পর্যন্ত এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের প্রতি অবিচার বন্ধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, এবং এই সংঘাতের একটি ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই সমাধান বের করতে হবে।
0 মন্তব্যসমূহ