গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে শুক্রবার দুপুরে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মাওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এক নয়। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ছিল গরিব মানুষের দল, যে দল বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছে। সেই আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এক নয়।”
কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগের মধ্যে আদর্শিক ও নীতিগত পার্থক্য। তিনি উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ছিল সত্যিকারের গণমানুষের দল। সেই দলটি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং গরিব, মেহনতি মানুষের কল্যাণে কাজ করেছিল। বঙ্গবন্ধুর সময়ের আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং সাম্যের আদর্শ নিয়ে পরিচালিত হতো।
তার মতে, বঙ্গবন্ধুর সময়ের আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে পরিচালিত হতো যেখানে সাধারণ মানুষের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার কেন্দ্রিকতা, দুর্নীতি এবং স্বার্থপরতায় নিমজ্জিত। কাদের সিদ্দিকীর ভাষায়, “আমি তো আওয়ামী লীগের কোনো দুর্দিন দেখি না। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ করত, কিন্তু এখনকার আওয়ামী লীগ সেই আদর্শ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে।”
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ ও সমসাময়িক অভিজ্ঞতা
বঙ্গবন্ধুর হত্যার সময়ের কথা উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আমি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলাম। সবাই তখন ইঁদুরের গর্তের মধ্যে ছিল।” তিনি দাবি করেন, যাদের কাছ থেকে তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করার জন্য সম্মান পাওয়ার আশা করেছিলেন, তাদের কাছ থেকে তিনি কোনো সম্মান পাননি। বরং তাদের অবহেলা এবং অসম্মানিত হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করার জন্য যাদের কাছ থেকে সম্মান পাওয়ার কথা ছিল, তারা আমাকে কোনো সম্মান করেনি বা দেখায়নি। বরং তাদের থেকে অসম্মানিত হয়েছি। তবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অনেক সম্মান পেয়েছি।”
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
কাদের সিদ্দিকী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাফল্য কামনা করেন এবং আন্দোলনের প্রতি তার বিশ্বাস ও সমর্থন প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমি আজ একটি কথা অবশ্যই বলব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাফল্য আমি মনেপ্রাণে কামনা করি ও বিশ্বাস করি। তবে টুঙ্গিপাড়াবাসীকে ধন্যবাদ জানাই, এই দুর্যোগের মধ্যেও তাঁরা বঙ্গবন্ধুর কবরকে মর্যাদার সঙ্গে রক্ষা করেছেন। আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশকে স্বাধীন করেছি। বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে বাংলাদেশে নেতৃত্ব করা যাবে না। বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করে, সম্মান করে, যতটা সম্মান তাঁর প্রাপ্য, ততখানি সম্মান দিয়েই আমাদের চলতে হবে।”
কাদের সিদ্দিকী আরও উল্লেখ করেন, “যে মূল্যবোধ দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলাম, সেই মূল্যবোধ এখন আর নেই। বঙ্গবন্ধুকে পেয়ে আমি দেশকে ভালোবাসতে শিখেছি। অনেকে দেশপ্রেমের কথা বলেন, কিন্তু দেশপ্রেম এত সহজ জিনিস নয়। এটা অর্জন করতে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পার করতে হয়।”
শেখ হাসিনার সঙ্গে অবস্থান ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রভাব
বঙ্গবন্ধুর মাজারে জিয়ারতের সময় কাদের সিদ্দিকীকে একজন ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি কতদিন শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকবেন। কাদের সিদ্দিকী উত্তর দেন, “আমি বলতে পারি যতক্ষণ উনি (শেখ হাসিনা) বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সঙ্গে থাকবেন, ততক্ষণ আমি তাঁর সঙ্গে থাকব।” এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করেন, তার সমর্থন কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা নেত্রীর প্রতি নয়, বরং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি। তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকবেন, যতক্ষণ শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করেন।
কাদের সিদ্দিকী টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে বেলা পৌনে একটায় জিয়ারত করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বড় ভাই ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। জিয়ারত শেষে তিনি দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা ফরিদ আহমেদ, আবদুর রহমান, পারভেজসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্য তার অতীতের প্রতিবাদী অবস্থান, বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসার প্রতিফলন ঘটায়। তিনি মনে করেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শের পথ থেকে সরে গেছে এবং তিনি দলটির এই অবস্থানকে সমালোচনা করেন। তার বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি এখনও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুগত এবং বাংলাদেশে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়ার আহ্বান জানান।
মুক্ত প্রকাশ
প্রতিবেদন: সম্পাদকীয় বিভাগ
0 মন্তব্যসমূহ