অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা সীমিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশের শিক্ষা খাতের জন্য একটি বড় পরিবর্তন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় জানা গেছে যে, ২০২৫ সালে দুই লাখ ৭০ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী তালিকাভুক্ত করা হবে না। এই সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দেশে রেকর্ড পরিমাণ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পর বিভিন্ন শহরে বাড়ির ভাড়া উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য তালিকাভুক্তির সীমা এক লাখ ৪৫ হাজার এবং ভোকেশনাল (বৃত্তিমূলক) প্রতিষ্ঠানের জন্য ৯৫ হাজার নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী জেসন ক্লেয়ার এই সিদ্ধান্তের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে বলেন, "মহামারির (কোভিড) পর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে এবং আমাদের বেসরকারি বৃত্তিমূলক ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ হার প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি।"
এই নতুন নিয়ম সম্পর্কে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদেরকে একটি সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে বিস্তারিত বিবরণ ছাড়া। বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে এই সিদ্ধান্তের আর্থিক ও অন্যান্য প্রভাব মূল্যায়ন করছে।
ইউনিভার্সিটি অব সিডনি তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তারা এই সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য প্রভাব পর্যালোচনা করছে এবং আন্তর্জাতিক উচ্চ শিক্ষার নিয়ন্ত্রিত প্রবৃদ্ধিতে সরকার ও শিক্ষাখাতের সঙ্গে সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডানকান মাসকেল মন্তব্য করেছেন, "আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা-সীমা বেঁধে দিলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর, সার্বিকভাবে উচ্চশিক্ষার খাতে এবং সমগ্র জাতির জন্য আগামী কয়েক বছরে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।"
আন্তর্জাতিক উচ্চ শিক্ষা অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম মূল্যবান রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। লোহার আকরিক, গ্যাস ও কয়লার পর এটি দেশের চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাত থেকে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে আয় হয়েছে ২৪ দশমিক সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা প্রায় তিন লাখ কোটি বাংলাদেশি টাকার সমান।
ইউনিভার্সিটি অস্ট্রেলিয়া সরকারের এই উদ্যোগকে 'রাশ টেনে ধরবে' হিসেবে বর্ণনা করেছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষা খাতে প্রবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত হবে, যা দেশটির অর্থনৈতিক ও শিক্ষামূলক পরিবেশের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার এই নতুন সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সীমিত করার মাধ্যমে দেশের উচ্চ শিক্ষা খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। যদিও এই পদক্ষেপ স্থানীয় শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে, তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ফলে কিছু চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশটির সরকার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতামূলকভাবে এই পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে দেশের উচ্চ শিক্ষা খাত সুস্থভাবে বিকশিত হতে পারে।
মুক্ত প্রকাশ
প্রতিবেদন: সম্পাদকীয় বিভাগ
0 মন্তব্যসমূহ