বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মো. শিমুল (৩৫) নামের এক ব্যক্তির হত্যার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমান, এবং বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসানসহ মোট ১৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবিঃ সংগৃহীত
৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া শহরের ঝাউতলা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মো. শিমুল নিহত হন। অভিযোগ অনুযায়ী, শিমুল ছাত্র-জনতাকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি টি জামান, বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর আরিফুর রহমান, এবং আবদুল মতিন সরকার সহ অন্যান্য আসামিরা তাঁকে লক্ষ্য করে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করেন। হামলার পর শিমুল বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
তাঁকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মামলায় বলা হয়েছে, হামলাকারীরা শিমুলের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখিত তিন সাংবাদিক—মাহমুদুল আলম, হাসিবুর রহমান, এবং জে এম রউফ—এর বিরুদ্ধে হত্যা, ককটেল ও পেট্রলবোমা হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, এই সাংবাদিকরা হামলার সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন অথবা হামলার সমন্বয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সইহান ওলিউল্লাহ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, মামলায় ১৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বগুড়ার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে গাবতলী পৌর শ্রমিক দলের সহসভাপতি জিল্লুর সরদার নিহত হওয়ার ঘটনায় ২৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সহ ৫৫৭ জনের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এই মামলার বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উত্তেজনা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে এবং এটি সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পর্কিত বলে দাবি করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলার ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই মামলা দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তন করতে পারে এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের তীব্র আন্দোলনকে উসকে দিতে পারে।
বগুড়া সদর থানার তদন্তকারীরা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের মোবাইল ফোন রেকর্ড, সাক্ষী এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত প্রমাণ সংগ্রহ করছে। প্রাথমিক তদন্তের ফলাফল বিচার ব্যবস্থার দিকে পরিচালিত হবে এবং এটি মামলার পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নির্ধারণ করবে।
মামলার মাধ্যমে শেখ হাসিনা এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলার কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বিষয়টির দিকে নজর রাখছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলি এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এই মামলার যথাযথ তদন্ত ও ন্যায়বিচারের জন্য চাপ প্রয়োগ করছে।
বগুড়ার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মো. শিমুল হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ, এবং পূর্ববর্তী হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে। মামলার তদন্তের ফলাফল এবং আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটিত হবে এবং এটি দেশের রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতার পরিবেশে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
মুক্ত প্রকাশ
প্রতিবেদন: সম্পাদকীয় বিভাগ
0 মন্তব্যসমূহ