বর্তমান সময়ে, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। তবে, বৈশ্বিক মহামারী, যুদ্ধ-সংঘাত, এবং বিশ্বজুড়ে আর্থিক অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছুটা চাপ সৃষ্টি করেছে। রেমিট্যান্স, পোশাক শিল্প, এবং কৃষিখাত এখনও অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ, তবে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থনীতিতে কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক | ছবিঃ DW থেকে নেওয়া |
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করলে দেখা যায় যে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষে, বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণ ছিল ৯৫.৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১১ সালের তুলনায় ২৩৮% বেশি। এই ঋণের বড় একটি অংশ হলো দীর্ঘমেয়াদী ঋণ, যা দেশের সরকার এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান দ্বারা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাবলিক সেক্টরের ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬২.৪ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF), এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB)। এছাড়াও চীন, জাপান, এবং ভারত থেকে নেওয়া ঋণও বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের একটি বড় অংশ।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি এবং বিশ্বব্যাপী মুদ্রানীতির কঠোরতার কারণে বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। দেশের বৈদেশিক ঋণের সুদের হার এবং ঋণ পরিশোধের পরিমাণও বাড়ছে, যা সরকারের অর্থনৈতিক পরিচালনায় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে তার ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা, যাতে দেশের অর্থনীতি সুদৃঢ়ভাবে এগিয়ে যেতে পারে।
তথ্যসূত্র:
1. The Business Standard (TBS)
2. CEIC Data
3. World Bank-IMF Debt Sustainability Analysis
আন্তর্জাতিক ঋণ:
বাংলাদেশের ঋণ গ্রহণ প্রধানত উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য, যার মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ খাত, এবং অন্যান্য শিল্পক্ষেত্র। বর্তমানে, বাংলাদেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশ থেকে ঋণ গ্রহণ করে চলেছে। এসব ঋণের মধ্যে প্রধানভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:
বিশ্বব্যাংক (World Bank) ও আইএমএফ (IMF):
উন্নয়ন প্রকল্প ও আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশ এই দুই সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে।
চীন:
অবকাঠামো প্রকল্প, বিশেষ করে পদ্মা সেতু ও অন্যান্য মেগা প্রকল্পের জন্য চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশ ঋণ গ্রহণ করেছে।
জাপান:
বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক বেশ দীর্ঘদিনের এবং জাপানের ঋণ প্রধানত উন্নয়ন সহায়তায় বিনিয়োগে ব্যবহার হয়।
ভারত ও রাশিয়া:
কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বাংলাদেশ এই দুই দেশের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে।
বর্তমানে, ঋণের বোঝা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ পুনর্গঠন, বৈদেশিক রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা, এবং স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার উপর নির্ভরশীলতা কমানো।
0 মন্তব্যসমূহ