সংকট মোকাবেলায় আইএমএফের কাছে ৭৭০ কোটি ডলারের ঋণ বাড়ানোর উদ্যোগে বাংলাদেশর

বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সংকটে পড়েছে, তখন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে আরও ঋণ নিতে উদ্যোগী হয়েছে। চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির আকার বাড়িয়ে ৭৭০ কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার।

আইএমএফ ও  বাংলাদেশ সরকার এর লোগো ছবিঃ সংগৃহীত 

অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল আগামী মাসের শেষ দিকে ঢাকায় আসবে। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে তারা অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে। এই সময়ে ঋণ কর্মসূচির আকার বৃদ্ধি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হবে।

ঋণের প্রয়োজনীয়তা ও সংকট পরিস্থিতি

দেশের বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। বকেয়া ঋণ পরিশোধ করতে স্থানীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে আরও ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার।

অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের কাছে ঋণ কর্মসূচির আকার বাড়ানোর অনুরোধ করবে। "পাকিস্তান যদি ৭০০ কোটি ডলারের ঋণ পেতে পারে, তাহলে বাংলাদেশেরও ভালো আশা করার সুযোগ রয়েছে," বলেছেন তিনি। এছাড়াও, বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে অতীত রেকর্ড পাকিস্তানের তুলনায় ভালো, যা আইএমএফের কাছে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

আলোচনার সময়সূচি ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা

আগামী ২১ থেকে ২৬ অক্টোবর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হবে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। এই সভায় বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেবে, যেখানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর উপস্থিত থাকবেন। সভার ফাঁকে আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচির আকার বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হবে। এরপর নভেম্বর মাসে আইএমএফের আরেকটি দল ঢাকায় আসবে, যারা চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় পর্যালোচনা বৈঠক করবে।

আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দে গত ৩১ জুলাই বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারকে একটি চিঠিতে জানিয়েছিলেন, ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় পর্যালোচনা বৈঠক করতে ২ থেকে ১৭ অক্টোবরের মধ্যে আইএমএফের একটি দল ঢাকায় আসতে চায়। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার এ সময়সূচির ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়নি।

সংস্কারের শর্ত ও চ্যালেঞ্জ

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের মতে, আইএমএফের ঋণ বরাদ্দের সীমা পেরিয়ে গেলে নতুন ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা সীমিত হতে পারে। তবে চলমান কর্মসূচির আকার বাড়ানোর উদ্যোগ থাকলে আরও ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, "ঋণের আকার বাড়লে নতুন শর্ত যোগ হবে, যা দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে ব্যাংক কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্কারে সরকারের পদক্ষেপ ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।"

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হিসাব-নিকাশের পর দেখা গেছে, আইএমএফ থেকে আরও ৩০০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের রয়েছে। তবে এই ঋণ পেতে গেলে দেশকে নতুন কিছু আর্থিক সংস্কার শর্ত মেনে চলতে হবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আইএমএফের কাছ থেকে আরও ঋণ পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সংকট এবং চলমান আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। তবে নতুন ঋণ পেতে গেলে সরকারকে আরও কঠোর শর্ত মেনে চলতে হবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একদিকে সুযোগ, অন্যদিকে চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

মুক্ত প্রকাশ

প্রতিবেদন: সম্পাদকীয় বিভাগ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ