পূর্বাচলে নৌকা আকৃতির অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম নির্মাণের স্বপ্ন এখন আপাতত ধূলিসাৎ হতে বসেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে স্টেডিয়াম প্রকল্পের বিশাল বাজেট বহন করা সম্ভব নয়। এ সিদ্ধান্ত স্টেডিয়াম প্রকল্পের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্টেডিয়ামটি নির্মাণের প্রথম পরিকল্পনা করেছিলেন তৎকালীন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, যেখানে এটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নামকরণ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেডিয়াম নির্মাণের লক্ষ্য ছিলো, কিন্তু দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে এই ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকায়। স্টেডিয়ামের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পপুলাসকে ইতোমধ্যে ৭৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বিসিবি।
ফারুক আহমেদ পূর্বাচল স্টেডিয়াম পরিদর্শন শেষে বলেন, “দু’টি মাঠ নিয়ে একটি বড় স্টেডিয়াম হবার কথা ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে এই স্টেডিয়ামের জন্য আমরা এত বড় বাজেট বরাদ্দ করতে পারবো না। এজন্য আমরা এই প্রকল্প থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তিনি আরও বলেন, "আমরা মূল নকশার সাথে সামঞ্জস্য করার চেষ্টা করবো এবং খেলার মাঠের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোতে ফোকাস করবো। আপাতত আমরা প্রথমে একটি মাঠ দিয়ে শুরু করবো, তারপর পাশের মাঠটিকে ক্রিকেটের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করবো। খুব শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে।"
বিশ্লেষকদের মতে, পূর্বাচলের এই স্টেডিয়াম দেশের ক্রিকেট অবকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার কথা ছিলো। বড় পরিসরে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের পাশাপাশি এটি দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত হতে পারতো। কিন্তু বিসিবির বর্তমান আর্থিক সীমাবদ্ধতা প্রকল্পটি পরিমার্জিত পরিকল্পনায় আনতে বাধ্য করছে।
বিসিবি আপাতত পূর্বাচলের প্রথম মাঠটি ক্রিকেট খেলার জন্য উপযোগী করে তোলার পরিকল্পনা করেছে। “প্রথমত, আমরা খেলার মাঠ এবং ড্রেসিং রুম তৈরি করবো। স্টেডিয়াম নিয়ে তাদের পরিকল্পনা আমি দেখিনি। এখন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না। আমরা মূল নকশার সাথে সামঞ্জস্য রেখে মাঠ এবং ড্রেসিংরুম তৈরি করার চেষ্টা করবো,” ফারুক আহমেদ বলেন।
এদিকে, নামমাত্র মূল্যে পূর্বাচলে পাওয়া বিস্তীর্ণ জায়গা এবং পরিকল্পিত স্টেডিয়ামের জন্য সরকারকে চাপ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশ্লেষকদের মতে, প্রকল্পটির স্থগিতাদেশ শুধু বিসিবির আর্থিক সংকটকেই নয়, বরং দেশের ক্রীড়া অবকাঠামোর জন্য একটি ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই মুহূর্তে বিসিবি কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করবে এবং প্রকল্পটিকে কোন দিকে নিয়ে যাবে, সেটিই দেখার বিষয়। ক্রিকেটপ্রেমীরা আশা করছেন, পরিস্থিতি সামলে নিয়ে পূর্বাচলের স্টেডিয়াম প্রকল্প পূর্ণতা পাবে এবং দেশের ক্রিকেট অঙ্গন আরও শক্তিশালী হবে।
পূর্বাচল স্টেডিয়ামের প্রকল্প বাতিলের এই সিদ্ধান্ত দেশে ক্রিকেট অবকাঠামো উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক পরিবর্তনের নির্দেশনা দিচ্ছে। প্রাথমিক নকশার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ছোট পরিসরে কাজ শুরু করলেও ভবিষ্যতে বিসিবি কি এই স্টেডিয়ামকে পূর্ণাঙ্গ রূপে গড়ে তুলতে পারবে কিনা, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
0 মন্তব্যসমূহ