বিএনপি’র ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী: সীমিত উদযাপন, মানবিকতা এবং জনগণের পাশে থাকার অঙ্গীকার

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আজ তাদের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে। ১৯৭৮ সালের এই দিনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিশাল প্রভাব বিস্তার করেছে। দলটি ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে দেশের শাসনভার পরিচালনা করেছে। তবে এবছর, সাম্প্রতিক বন্যার কারণে অসংখ্য মানুষ যখন অসহায় জীবন-যাপন করছেন, তখন তাদের পাশে দাঁড়াতে বিএনপি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানসূচি সীমিত করে একটি মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ছবিঃ মুক্ত প্রকাশ 
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলা এবং অন্যান্য কিছু এলাকায় সাম্প্রতিক বন্যায় হাজার হাজার মানুষ দুর্দশাগ্রস্ত হয়েছে। এসব মানুষ বাড়িঘর হারিয়ে, আশ্রয়কেন্দ্রে কিংবা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, দলের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে থাকার উদ্দেশ্যে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদযাপন সীমিত করা হয়েছে। দলটির কর্মসূচি সম্পর্কে তথ্য প্রদান করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এই সিদ্ধান্ত মূলত বন্যা পীড়িত মানুষের দুর্দশার প্রতি সম্মান জানিয়ে এবং তাদের পাশে থাকার উদ্দেশ্যেই নেওয়া হয়েছে।”

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি ও ত্রাণ তহবিল বরাদ্দ

এ বছর বিএনপি তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি সীমাবদ্ধ করে শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি (১ সেপ্টেম্বর) অনাড়ম্বরভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ‘বন্যার কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ৬ দিনের কর্মসূচি কমিয়ে শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন উদযাপন করা হবে।’ 

কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর দলের শীর্ষ নেতারা সকাল ১১টায় বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। এ সময় নেতাকর্মীরা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং জনগণের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে বাদ আসর সারাদেশে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া মাহফিলে বন্যাদুর্গত মানুষের কষ্ট লাঘব, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত এবং দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়। এছাড়াও, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসার জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়। এ বছরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমস্ত খরচের অর্থ বন্যার্তদের জন্য গঠিত ত্রাণ তহবিলে প্রদান করা হয়েছে।

বিএনপি’র মানবিক উদ্যোগ এবং রাজনৈতিক অবস্থান

বিএনপি’র এই উদ্যোগ শুধু রাজনৈতিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি তাদের মানবিক এবং জনদায়িত্বের বহিঃপ্রকাশ। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে জনগণের পাশে থাকার মাধ্যমে বিএনপি প্রমাণ করেছে যে তারা কেবল রাজনৈতিক শক্তিই নয়, বরং জাতীয় দুর্যোগেও জনগণের সহায়ক। 

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “বিএনপি সবসময়ই জনগণের পাশে থেকেছে। আমরা বিশ্বাস করি, দল হিসেবে আমাদের মূল দায়িত্ব হলো জনগণের কল্যাণে কাজ করা, বিশেষ করে সংকটের সময়ে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের কর্মসূচির পরিবর্তন এবং ত্রাণ তহবিলে অবদান রেখে আমরা বন্যার্তদের সহায়তায় সরাসরি অবদান রাখতে চাই।”

বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রতিক্রিয়া এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বিএনপি’র এই সীমিত পরিসরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন দেশের বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বিএনপি’র এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন। তারা মনে করেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন মানবিক এবং জনগণের পাশে থাকার উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। 

বিএনপি’র পক্ষ থেকে দলীয় নেতারা বলেছেন, তারা জনগণের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে অবিচল রয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যেন তারা বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং যথাসম্ভব সহায়তা প্রদান করে। 

বিএনপি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বিএনপি তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে দলের অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভিডিও বার্তায় দলীয় নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা দেশের বর্তমান সংকট মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে। দলটির লক্ষ্য হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমুখী বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে জনগণের অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকবে।

বিএনপি’র এই মানবিক এবং সহমর্মিতাপূর্ণ উদ্যোগ প্রমাণ করে যে তারা দেশের সংকটময় মুহূর্তে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরে গিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করার এমন দৃষ্টান্ত রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। বিএনপি’র এবারের সীমিত উদযাপন কেবলমাত্র একটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নয়, বরং দেশের মানুষের প্রতি তাদের অবিচল সহানুভূতির প্রতিফলন।

মুক্ত প্রকাশ

প্রতিবেদন: সম্পাদকীয় বিভাগ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ