২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলাফল তৈরি করতে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার নম্বরের সমন্বয় পদ্ধতি বা সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। এই পদ্ধতিতে জেএসসি পরীক্ষার ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি পরীক্ষার ৭৫ শতাংশ নম্বরের গড় করে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করা হবে।
শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বাতিল হওয়া ছয়টি বিষয়ের ফলাফল সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হবে। এ পদ্ধতিতে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জেএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ৭৫ শতাংশ যুক্ত করে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি হবে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো শিক্ষার্থী যদি জেএসসি পরীক্ষায় কোনো বিষয়ে ১০০ নম্বর পেয়ে থাকে, তবে ওই বিষয়ে তার ২৫ নম্বর নেওয়া হবে। একই বিষয়ে এসএসসিতে ১০০ নম্বর পেলে ৭৫ নম্বর যুক্ত করে মোট ১০০ নম্বরের ফলাফল নির্ধারণ করা হবে।
২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ৩০ জুন, যা ১৬ জুলাই পর্যন্ত নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হয়। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে ১৮ জুলাইয়ের এবং পরবর্তীতে ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এর মধ্যে সরকার পরিবর্তনসহ বড় রাজনৈতিক অস্থিরতা ঘটে, এবং দেশের বিভিন্ন থানায় হামলার কারণে কিছু এলাকার প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ পরিস্থিতিতে সামগ্রিক নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে পরীক্ষাগুলোর তারিখ কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়। অবশেষে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ফলাফল প্রকাশের প্রস্তাব ইতোমধ্যে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং তা যাচাই-বাছাই চলছে। শিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার জানান, প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয় অনুমোদন করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। শিক্ষা বোর্ড ইতোমধ্যে ফলাফল তৈরির জন্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে। শিক্ষা বোর্ড আশাবাদী যে সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে।
করোনা মহামারির সময়ও একই ধরনের পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল। ২০২০ সালে করোনার কারণে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল এবং সব পরীক্ষার্থীকে অটো পাস করানো হয়। তখন এসএসসি, জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে গড় মূল্যায়ন করে ফল প্রকাশ করা হয়েছিল। পরবর্তী বছরও কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা নিয়ে বাকি বিষয়ের ফল একইভাবে সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ফলাফল তৈরি করা হচ্ছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলোর কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়। অনেক শিক্ষার্থী এই বিষয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করে এবং স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। ২০ আগস্ট সচিবালয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে তাদের দাবি জানায়। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চলতি বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি বোর্ড ও মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে মোট ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন পরীক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। বোর্ড সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের মেধার যথাযথ মূল্যায়নে সহায়ক হবে এবং পরীক্ষার চাপ কমাবে। এ সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও উচ্চশিক্ষার জন্য সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের অতীতের অর্জনকে মূল্যায়ন করে সঠিকভাবে তাদের মূল্যায়ন নিশ্চিত করবে। যদিও কিছু শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক এ পদ্ধতি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তবুও শিক্ষা বোর্ড আশাবাদী যে সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়নে সহায়ক হবে এবং পরীক্ষার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
শিক্ষা বোর্ড এবং মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়ার পরই ফলাফল প্রকাশিত হবে। সব মিলিয়ে, শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে এবং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
মুক্ত প্রকাশ
প্রতিবেদন: সম্পাদকীয় বিভাগ
0 মন্তব্যসমূহ