বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়: রাওয়ালপিন্ডিতে ২-০ তে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ

বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন হিসেবে স্থান করে নিয়েছে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়। পঞ্চম দিনের বিকেলে ছয় উইকেটের জয়ে বাংলাদেশ নিশ্চিত করে তাদের তৃতীয় সর্বোচ্চ চতুর্থ ইনিংসে সফল রান তাড়া করার রেকর্ড। এই সিরিজ জয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ঐতিহাসিক, কারণ এটি গত সাত বছরে বিদেশের মাটিতে তাদের চতুর্থ টেস্ট জয় এবং তৃতীয়বারের মতো বিদেশে টেস্ট সিরিজ জয়।

 বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান  | ছবিঃ BCB 

বাংলাদেশ ২৬২ রানে প্রথম ইনিংস শেষ করে যেখানে লিটন দাস করেন অনবদ্য ১৩৮ রান, অন্যদিকে পাকিস্তানের বোলার খুররম শেহজাদ নেন ৬ উইকেট। পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রান করে। পাকিস্তানের পক্ষে তায়্যব আয়ুব করেন ৫৮ রান এবং মেহেদি হাসান মিরাজ ৫১ রানে ৫ উইকেট তুলে নেন। পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭২ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর সালমান আগা ৫৭ রানে অপরাজিত থাকেন, অন্যদিকে মাহমুদ নেন ৫ উইকেট ৪৩ রানে।

জয়ের লক্ষ্যে ১৮৫ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ শীর্ষ সারির ব্যাটসম্যানরা দৃঢ়তার পরিচয় দেয়। জাকির হাসান করেন ৪০ রান, নাজমুল হোসেন শান্ত এবং মুমিনুল হক দুজনেই স্থির ৩০ রান করে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুশফিকুর রহিম এবং সাকিব আল হাসান দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন, যা বাংলাদেশ শিবিরে উদযাপনের সূচনা করে।

বাংলাদেশের পক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিকতা তাদের এই জয়ের মূল চাবিকাঠি ছিল। শান্ত এবং মুমিনুলের জুটি পাকিস্তানের বোলারদের কোণঠাসা করে দেয়, যদিও পাকিস্তান শুরুতে কিছু চমৎকার লেংথে বল করে রান আটকে রাখে। প্রথম সেশনে ২৭ ওভারে মাত্র ৮০ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। তবু দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৬৩ রান এবং হাতে ছিল ৮ উইকেট।

পাকিস্তানের বোলাররা পরিকল্পনামাফিক বল করে রান আটকে রাখলেও শান্ত এবং মুমিনুল সময়ের সঠিক ব্যবহারে লক্ষ্য পূরণের দিকে এগোতে থাকেন। শান্ত কিছু আক্রমণাত্মক শট খেলেন, তবে মুমিনুল একক ও ডাবলস নিয়ে খেলার চাপে পড়েননি। সাকিব আল হাসান তৃতীয় সেশনের আগে একটি স্ট্রেইট ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন এবং ম্যাচের শেষ বলটি খেলেন কাভারের দিকে এক জোরালো ড্রাইভ মেরে।

এই জয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ টেবিলে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে, পিছনে ফেলেছে ইংল্যান্ডকে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের জন্য এ ছিল একটি হতাশার দিন। তারা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের পর থেকে ঘরের মাটিতে টানা দশটি টেস্টে জয়বিহীন রয়ে গেছে।

পাকিস্তানের বোলাররা যদিও কিছু সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছিল, তবে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় তাদের প্রত্যাবর্তনের সব আশা শেষ হয়ে যায়। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম এবং সাকিব আল হাসান ঠাণ্ডা মাথায় সব ভুল এড়িয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছান। সাকিব আল হাসানের হাত ধরে জয় সূচক চারটি রান আসলে বাংলাদেশের এই অসাধারণ সফরের পরিসমাপ্তি ঘটে।

বাংলাদেশ দলের জন্য এটি শুধুমাত্র একটি সিরিজ জয় নয়, বরং বিদেশের মাটিতে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণের একটি মাইলফলক। এই জয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে এবং ভবিষ্যতে দলটির জন্য আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

মুক্ত প্রকাশ

প্রতিবেদন: ক্রীড়া বিভাগ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ