শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা ও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বর্তমান প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে তাকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে দেশজুড়ে আলোচনা চলছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, দেশের লিগ্যাল সিস্টেম থেকে নির্দেশনা পেলে শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত আনার চেষ্টা করা হবে। তার এই বক্তব্য বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং বিদ্যমান চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনার প্রশ্ন তুলে ধরেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ব্রিফিং ছবিঃ মুক্ত প্রকাশ 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, "যদি দেশের আইন-আদালত আমাকে তাকে (শেখ হাসিনাকে) ফেরত আনার ব্যবস্থা নিতে বলে তাহলে সে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।" পররাষ্ট্র উপদেষ্টা স্পষ্ট করেন যে, শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার যে কোনো পদক্ষেপ আদালতের নির্দেশের ওপর নির্ভরশীল এবং এ বিষয়ে ভারতের সাথেও আলাপ-আলোচনা প্রয়োজন।

ভারতে শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থান এবং তার লাল পাসপোর্ট বাতিল হওয়ার পর তার স্ট্যাটাস নিয়ে জিজ্ঞাসার জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “তারাই বলতে পারবে কোন স্ট্যাটাসে শেখ হাসিনা ভারতে আছেন।” তিনি এ বিষয়ে ভারতের কাছে তথ্য জানার আহ্বান জানান। এর মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দেন যে, শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও সুস্পষ্টতা দরকার।

ভারতীয় প্রকল্পের স্থগিতকরণ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা:

সম্প্রতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় প্রকল্পগুলোর কাজ স্থগিত থাকা নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "আস্তে আস্তে সব নরমাল হয়ে আসবে এবং তারাও (ভারতীয়রা) কাজে আসবেন।" তিনি বলেন, "এটা তো অনস্বীকার্য যে কোন বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের পরে একটু অস্থিরতা থাকতেই পারে। আমাদের এখানেও ল অ্যান্ড অর্ডার নিয়ে একটু প্রব্লেম ছিলো, সেটাকে আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পেরেছি। এখন আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হয়ে আসবে, এবং তারাও (ভারতীয়রাও) আসবেন, কারণ চলমান প্রজেক্টগুলো আমাদেরকে শেষ করতে হবে।"

তৌহিদ হোসেনের এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে মুলত অস্থায়ী অস্থিতিশীলতা এবং পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির প্রয়োজন। এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন যে, “ভারতীয়রা এক ধরনের ভীতির মধ্যে আছেন। এ ভীতি থেকে তারা নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসতে পারবেন।” এতে ভারতের সাথে চলমান প্রকল্পগুলো পুনরায় শুরুর ব্যাপারে আশাবাদী মনোভাব প্রকাশ পায়।

সমঝোতা স্মারক (MOU) পুনর্বিবেচনা: 

বিগত সরকারের সময়ে ভারতের সঙ্গে হওয়া সমঝোতা স্মারক (MOU) গুলো পুনর্বিবেচনা করা হবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, "এমওইউ চূড়ান্ত চুক্তি নয়। কাজেই এখানে আমাদের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়েছে কি না সেটি আমরা দেখতেই পারি। দেশের স্বার্থ রক্ষা করে যা করা দরকার আমরা তাই করব।" 

তার এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, বর্তমান সরকার ভারতের সাথে যে কোনো সমঝোতা পুনর্বিবেচনা করতে প্রস্তুত, তবে তা দেশের স্বার্থ রক্ষা করে হবে। এমওইউ কোনো স্থায়ী বাধ্যবাধকতা নয় এবং তা পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হতে পারে। 

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের অংশগ্রহণের বিষয়ে মো. তৌহিদ হোসেন জানান, “প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যাচ্ছেন। সে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তিনি খুব সংক্ষিপ্ত সফর করে চলে আসবেন।” প্রধান উপদেষ্টার এই সফর কূটনৈতিক মহলে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দিকনির্দেশনা এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান নতুনভাবে প্রকাশিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সাম্প্রতিক বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনার বিষয়টি বিচারিক নির্দেশনার ওপর নির্ভরশীল এবং তা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা হবে। একই সঙ্গে, ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্কের নানা দিক এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। 

প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরুর সম্ভাবনা এবং সমঝোতা স্মারক পুনর্বিবেচনার ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বর্তমান সরকারের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছে। এ সব পদক্ষেপ বাংলাদেশের কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং তা ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। 

মুক্ত প্রকাশ

প্রতিবেদন: সম্পাদকীয় বিভাগ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ