গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের ফলে ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের ওপর ক্রমবর্ধমান দমন-পীড়ন এবং সহিংসতা ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। প্যালেস্টাইন প্রিজনার্স সোসাইটি (পিপিএস) জানিয়েছে যে, অক্টোবর ৭ থেকে শুরু হওয়া গাজার সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত ৯৮ জন ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে।
সাংবাদিকের জানাযার নামাজের সময় তো ছবি | ছবিঃ মুক্ত প্রকাশ |
পিপিএস আরও জানিয়েছে যে, আটক সাংবাদিকদের মধ্যে ১৭ জন গাজা থেকে আসা, এবং এদের মধ্যে দুইজন — নিদাল আল-ওয়াহিদি ও হায়থাম আব্দুল ওয়াহিদ — জোরপূর্বক নিখোঁজ রয়েছেন। আটক ৫২ জনের মধ্যে ১৫ জনকে প্রশাসনিক বন্দিত্বে রাখা হয়েছে, যা কোনো রকম অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই কারাগারে বন্দী রাখার একটি বিতর্কিত পদ্ধতি। সাম্প্রতিকতম সাংবাদিক যাকে প্রশাসনিক বন্দিত্বে নেয়া হয়েছে, তিনি হলেন পশ্চিম তীরের তূলকারেম শহরের ফটোজার্নালিস্ট হাজিম নাসের। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলের এই ধরনের বন্দিত্বের নিন্দা জানিয়েছে এবং এটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) জানিয়েছে যে, ইসরায়েলি বাহিনী অক্টোবর ৭ থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে গাজায় ১৩০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও মিডিয়া কর্মীকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে অন্তত ৩০ জন তাদের সাংবাদিকতার কাজ করার সময় প্রাণ হারিয়েছেন। আরএসএফের মতে, এই সংখ্যা প্রমাণ করে যে সাংবাদিকদের টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে, যা শুধু সংবাদ সংগ্রহ নয়, বরং মুক্ত সাংবাদিকতার উপর মারাত্মক আঘাত।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো মনে করছে, সাংবাদিকদের উপর এই ধরনের আক্রমণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত। তারা জোর দাবি করেছে যে, সাংবাদিকদের কাজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং সংঘাতের সময় তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ প্রদান করতে হবে। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা শুধুমাত্র একটি মৌলিক অধিকার নয়, বরং এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি।
ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের এই পরিস্থিতি শুধু তাদের পেশাগত জীবনের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে না, এটি পুরো গণমাধ্যম জগতের উপর এক অন্ধকার ছায়া ফেলেছে। সাংবাদিকদের আটকের মাধ্যমে মূলত সত্যকে আটকে দেয়া হচ্ছে, যা বিশ্বের সামনে সংঘাতের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে বাধা সৃষ্টি করছে। তাই, আন্তর্জাতিক মহলের উচিত এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যেন সাংবাদিকরা নির্ভয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন এবং সংঘাতপূর্ণ এলাকায় প্রকৃত চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে পারেন।
গাজায় চলমান এই সংঘাতে সাংবাদিকদের আটক ও হত্যার ঘটনা শুধু তথ্য প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে না, বরং এটি অঞ্চলের মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর গভীর প্রভাব ফেলছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আহ্বান, যুদ্ধকালীন সময়ে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া এবং আটক সাংবাদিকদের অবিলম্বে মুক্তি নিশ্চিত করা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলাও বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মুক্ত প্রকাশ
প্রতিবেদন: আন্তর্জাতিক ডেস্ক
0 মন্তব্যসমূহ