সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ সম্প্রতি বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ২০০৯ সালের এই বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নির্মমভাবে নিহত হন, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য এক অভূতপূর্ব ক্ষতি ছিল। সোহেল তাজ দাবি করেছেন, এই বিদ্রোহ শুধুমাত্র বিডিআর বাহিনীর অভ্যন্তরীণ একটি ঘটনা ছিল না; বরং এর পেছনে ছিল একটি গভীর ষড়যন্ত্র, যা দেশের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করতে পরিচালিত হয়েছিল।
সোহেল তাজের বক্তব্য অনুযায়ী, বিদ্রোহের পেছনে ছিল কিছু দেশের অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রকারী এবং বিদেশি শক্তি, যারা এই ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে চেয়েছিল। তিনি বলেন, "এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের উপর বড় ধরনের আঘাত ছিল। বিডিআর বিদ্রোহের ফলে অনেক মেধাবী ও দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তার জীবন চলে গেছে, যা আমাদের সেনাবাহিনীর জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।"
সোহেল তাজ আরও জানান, বিডিআর বিদ্রোহের প্রকৃত কারণ এবং দোষীদের চিহ্নিত করতে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজন। তার মতে, শুধুমাত্র সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরীণ অবস্থা নয়, বরং উচ্চপর্যায়ের ষড়যন্ত্র এবং বিদেশি শক্তির প্রভাব এই বিদ্রোহের পেছনে ছিল। এমনকি এই ঘটনা দেশের সার্বভৌমত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করার একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
সোহেল তাজের এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ তার বক্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন এবং এই ঘটনার পুনঃতদন্তের আহ্বান জানাচ্ছেন। তাদের মতে, সোহেল তাজের এই বক্তব্য দেশের সামরিক ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে এবং এর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
অন্যদিকে, বিরোধী রাজনৈতিক মহলে তার বক্তব্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করা হচ্ছে। তাদের মতে, এ ধরনের মন্তব্য শুধু জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে এবং দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে, সোহেল তাজের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পুনঃতদন্তের আহ্বান জানানো হলেও, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি, যাতে দেশের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
সোহেল তাজের দাবি ও অভিযোগ নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং এটি স্পষ্ট যে, বিডিআর বিদ্রোহ এখনও দেশের মানুষের মনে গভীর ক্ষত হিসেবে রয়ে গেছে। এই বিদ্রোহের পূর্ণাঙ্গ সত্য উদঘাটন এবং দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে আরও একটি মাইলফলক স্থাপন করা সম্ভব।
এমন প্রেক্ষাপটে, সোহেল তাজের বক্তব্য জাতীয় নিরাপত্তা এবং সুশাসনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এই ঘটনাটি তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
মুক্ত প্রকাশ
প্রতিবেদন: সম্পাদকীয় বিভাগ
0 মন্তব্যসমূহ