সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫৭ বাংলাদেশি নাগরিকের মুক্তি, প্রবাসে মানবিকতার উদাহরণ

সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান সম্প্রতি ৫৭ জন বাংলাদেশি নাগরিককে মুক্তি দিয়েছেন, যারা প্রবাসে অবস্থানকালে বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিল। ইউএই-এর রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা WAM মঙ্গলবার এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেয়, যা কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এই বাংলাদেশি নাগরিকদের শাস্তি বাতিলের মাধ্যমে তাদের মুক্তির পথ সুগম করবে। 

শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান | ছবিঃ মুক্ত প্রকাশ 
এই ৫৭ জন বাংলাদেশি নাগরিক সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিভিন্ন কাজে প্রবাসী ছিলেন। তারা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে চলমান অস্থিরতা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিবাদে অংশ নেন। এ ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি ইউএই-এর কঠোর আইন এবং সামাজিক নিরাপত্তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এই ধরনের কার্যকলাপ দেশটির আইনের পরিপন্থী হওয়ায়, ওই ব্যক্তিদের দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছিল।

তবে প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের এই মানবিক পদক্ষেপ প্রবাসী কমিউনিটির প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সহানুভূতিশীল মনোভাবের প্রতিফলন ঘটায়। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদত্ত এই ক্ষমা কেবলমাত্র আইনি ব্যবস্থা নয়, বরং মানবিকতার এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরে এই প্রবাসী নাগরিকদের মুক্তির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশি কূটনীতিকরা ইউএই-এর সঙ্গে একাধিক দফায় বৈঠক করে এবং তাদের মুক্তির জন্য সহানুভূতির আবেদন জানায়। অবশেষে এই প্রচেষ্টা সফল হয় এবং প্রেসিডেন্ট আল নাহিয়ান ৫৭ জন বাংলাদেশি নাগরিকের কারাদণ্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন।

বাংলাদেশ সরকার সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই মানবিক উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, “এই ক্ষমার সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ককে আরও মজবুত করবে এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থ সুরক্ষায় আমাদের প্রচেষ্টাকে আরও গতিশীল করবে।”

মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলো এই খবরে ব্যাপক স্বস্তি ও আনন্দ প্রকাশ করেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রিয়জনদের মুক্তির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এই মুক্তি শুধুমাত্র একটি আইনি প্রক্রিয়ার সমাপ্তি নয়, বরং তাদের জীবনে নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে। প্রবাসী কমিউনিটিতে এই সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হয়েছে, এবং এটি প্রবাসীদের মধ্যে একটি ইতিবাচক বার্তা প্রেরণ করেছে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ এবং সেই প্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া আইনি পদক্ষেপগুলি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে এসেছে। প্রবাসে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের মধ্যে এমন কর্মকাণ্ড বন্ধে এই সিদ্ধান্ত একটি উদাহরণ তৈরি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আরও উন্নয়ন ঘটাবে। এটি কেবলমাত্র সরকারী স্তরে নয়, বরং প্রবাসীদের মধ্যে সৃষ্ট অসন্তোষ নিরসনে এবং প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের স্বার্থ রক্ষায় একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের এই ক্ষমা এবং বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সমন্বয়ে গঠিত এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের উদ্যোগ দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ ও পারস্পরিক সমঝোতায় আরও বড় ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মুক্ত প্রকাশ

প্রতিবেদন: সম্পাদকীয় বিভাগ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ