শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেণির শিখনকালীন মূল্যায়ন ও বার্ষিক পরীক্ষার জন্য নতুন নির্দেশনা প্রদান করেছে। নতুন নির্দেশনার মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়াকে উন্নত করা এবং সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা, যাতে তারা পাঠ্যবিষয়ে আরও গভীরভাবে দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
শিক্ষার্থী | ছবিঃ সংগৃহিত |
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিখনকালীন মূল্যায়নকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রতিটি বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকে উল্লেখিত একক কাজ, জোড়ায় কাজ, এবং পোস্টার প্রেজেন্টেশনসহ যাবতীয় কার্যক্রম শিখনকালীন মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। এই মূল্যায়ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রাপ্তি এবং বিষয়বস্তুর প্রতি তাদের বোধশক্তি যাচাই করার অন্যতম মাধ্যম।
এনসিটিবি থেকে নির্দেশিত হয়েছে, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে শিখনকালীন মূল্যায়ন পরিচালনা করতে হবে এবং সেসব কার্যক্রমের রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে। বার্ষিক ফলাফল নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই মূল্যায়ন বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
নম্বর বণ্টন ও ফলাফল প্রস্তুতির পদ্ধতি
প্রতিটি বিষয়ের জন্য মোট ১০০ নম্বর নির্ধারিত হবে। এর মধ্যে শিখনকালীন মূল্যায়নের জন্য ৩০ শতাংশ এবং বার্ষিক পরীক্ষার জন্য ৭০ শতাংশ বরাদ্দ থাকবে। শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণে এই দুই ধাপের গুরুত্ব সমানভাবে বিবেচিত হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো শিক্ষার্থী বাংলা বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়নে ৩০ এর মধ্যে ২৫ নম্বর এবং লিখিত পরীক্ষায় ১০০ এর মধ্যে ৮০ নম্বর পায়, তবে তার বার্ষিক ফলাফল হবে ২৫ + (৮০-এর ৭০ শতাংশ), অর্থাৎ ৮১। এই নম্বর অনুযায়ী শিক্ষার্থী 'অ+' গ্রেড পাবে এবং তার গ্রেড পয়েন্ট হবে ৫.০০।
বার্ষিক পরীক্ষার কাঠামো
২০২৪ শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক পরীক্ষার জন্য এনসিটিবি থেকে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি বিষয়ের বার্ষিক পরীক্ষা ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে, যার সময়সীমা থাকবে ৩ ঘণ্টা। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এনসিটিবি প্রদত্ত প্রশ্নের নমুনা অনুসারে প্রণয়ন করতে হবে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানই হুবহু এনসিটিবির নমুনা প্রশ্নপত্র ব্যবহার করতে পারবে না। শিক্ষকেরা নিজস্ব উদ্যোগে প্রশ্ন প্রণয়ন করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ করবেন।
গ্রেড পয়েন্ট ও উত্তীর্ণ হওয়ার শর্ত
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে গ্রেড পয়েন্ট ও লেটার গ্রেড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রেড দেওয়া হবে, যেমন ৮০-১০০ নম্বর পেলে 'A+' (৫.০০), ৭০-৭৯ নম্বর পেলে 'A' (৪.০০), এবং ৩৩-৩৯ নম্বর পেলে 'E' (১.০০)। একটি বিষয়ে সর্বনিম্ন 'E' গ্রেড পেলেই শিক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ বলে বিবেচনা করা হবে। তবে, ৩ বা তার বেশি বিষয়ে 'E' গ্রেড পেলে শিক্ষার্থী পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারবে না।
বিশেষ বিবেচনা
২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য বিশেষ একটি বিবেচনা রাখা হয়েছে। যদি কোনো শিক্ষার্থী ৩ বা তার বেশি বিষয়ে 'উ' গ্রেড পায়, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান বিশেষ বিবেচনায় তাকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ দিতে পারেন। তবে, এটি শুধুমাত্র ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রযোজ্য থাকবে।
এই নতুন নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়িত্বশীল হতে হবে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে এই মূল্যায়ন পদ্ধতি তাদের ভবিষ্যৎ দক্ষতা ও সফলতার দিকে ধাবিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুক্ত প্রকাশ
প্রতিবেদন: সম্পাদকীয় বিভাগ
0 মন্তব্যসমূহ