ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় তাদের ব্যাপক হামলা অব্যাহত রেখেছে, যার ফলে নতুন করে আরও ৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এসব মৃত্যুর তালিকায় নারী ও শিশুরাও অন্তর্ভুক্ত। সাম্প্রতিক এই হামলার ঘটনার পর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক নিন্দার ঝড় উঠেছে, বিশেষ করে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে হামলায় অন্তত ১৮ জনের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার শিকারদের মধ্যে ৬ জন সহায়তা কর্মী ছিলেন, যারা ওই স্কুলে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের পাশে থেকে তাদের সহায়তা করছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত ওই স্কুলটিতে শতাধিক নিরপরাধ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। স্কুলটি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল, কিন্তু ইসরায়েলি বিমান হামলায় এই কেন্দ্রটিও রেহাই পায়নি। হামলায় স্কুল ভবনটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রচুর সংখ্যক মানুষ হতাহত হয়। নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বেশ কয়েকজন সহায়তা কর্মী রয়েছেন, যারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিলেন।
এই হামলা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো। জাতিসংঘের মহাসচিব এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, "স্কুল, হাসপাতাল এবং অন্যান্য জনবসতি কখনওই যুদ্ধক্ষেত্র হতে পারে না। এগুলোকে নিরাপদ স্থান হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।" তিনি এ ধরনের হামলার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলো এই হামলায় হতাহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়ে দ্রুত সহিংসতা বন্ধের দাবি তুলেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাদের কার্যক্রমের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলছে, তারা কেবল সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অবস্থান ও রকেট উৎক্ষেপণ স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করেই হামলা চালাচ্ছে। তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে গাজার জনবহুল এলাকাগুলোতে প্রতিনিয়ত বোমা বর্ষণ ও গোলাবর্ষণের কারণে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে এবং ইসরায়েলের এসব কার্যক্রমকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
গাজার হাসপাতালগুলো ইতোমধ্যেই রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আহতদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, ওষুধপত্র, এবং চিকিৎসক-কর্মীর অভাব দেখা দিয়েছে। জরুরি সেবাগুলো কার্যত ধসে পড়েছে এবং বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্য ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। হামলার কারণে গাজায় প্রবেশাধিকার সীমিত হওয়ায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যদি সহিংসতা দ্রুত বন্ধ করা না হয়, তাহলে গাজায় সম্পূর্ণ মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, এবং তাদের ভবিষ্যত এখন অন্ধকারের মুখে। খাদ্য ও পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় পরিবারগুলো অপুষ্টি ও অসুস্থতায় ভুগছে। গাজার বাসিন্দারা দিন কাটাচ্ছেন অবিরাম বোমা বর্ষণের আতঙ্ক নিয়ে, যেখানে তারা জানেন না পরবর্তী মুহূর্তেই কোন বিপদ তাদের ওপর এসে পড়বে।
বিশ্বজুড়ে সরকার ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই সহিংসতা বন্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তুলেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানিয়েছে এবং সংঘাতে শিশু ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি গাজায় মানবিক সংকটকে গভীরতর করছে এবং সংঘাতের সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে সকল পক্ষের সংযম এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়া উচিত।
অবিরাম সংঘাত ও ধ্বংসযজ্ঞের এই চিত্রে, গাজার সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা, জীবনের অধিকার এবং সম্মানের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর বর্তায়। গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করাই এখন সময়ের দাবি।
মুক্ত প্রকাশ
প্রতিবেদন: আন্তর্জাতিক ডেস্ক
0 মন্তব্যসমূহ