বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খানের বিরুদ্ধে সড়কে চাঁদাবাজিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। গত ১২ বছরে সড়কে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি হয়েছে, যা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত ২৪৯ শ্রমিক ইউনিয়নের মাধ্যমে। অভিযোগ রয়েছে যে, এই বিপুল পরিমাণ অর্থের একটি বড় অংশ শাজাহান খানের পকেটে গিয়েছে, যা তার ক্ষমতার অপব্যবহারের উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শাজাহান খান | ছবিঃ মুক্ত প্রকাশ |
কোভিড-১৯ মহামারীর সময়, সরকার লকডাউন ঘোষণা করলে গণপরিবহণ বন্ধ হয়ে যায়। পরে, ২০২০ সালের পহেলা জুন থেকে গণপরিবহণ পুনরায় চালু হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে জুন, জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাস সড়কে চাঁদা তোলা বন্ধ ছিল। তবে এই সুযোগে চাঁদা তোলার নতুন ফন্দি আঁটা হয় এবং প্রণয়ন করা হয় ‘সড়ক পরিবহণে সংগঠন পরিচালনা ব্যয়’ বা সার্ভিস চার্জ সংক্রান্ত নির্দেশিকা। এই নির্দেশিকা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি, সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশন, বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, এবং ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি।
নির্বাচনী হলফনামার তথ্যানুসারে, ২০০৮ সালে শাজাহান খানের বার্ষিক আয় ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, যা ২০২৪ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২১ লাখ টাকায়। এই সময়ে তার আয় প্রায় ৩২ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবহণ শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ হানিফ খোকন জানান, সড়ক পরিবহণ আইনে রাস্তা থেকে চাঁদা তোলার কোনো বিধান নেই। তারপরও, শাজাহান খান এবং তার সহযোগীরা পরিবহণ খাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করেছেন। অভিযোগ রয়েছে যে, চাঁদাবাজির আয়ে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি করেছেন, যা রাষ্ট্রের জন্য একটি চিন্তার বিষয়।
শাজাহান খানের নেতৃত্বে এবং প্রভাবের কারণে সড়কে সাধারণ মানুষ এবং পরিবহণ মালিকরা বছরের পর বছর চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন। তার মাস্তান বাহিনীর কাছে পরিবহণ মালিকরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এমনকি বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী দলের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতেও তিনি তার প্রভাব ব্যবহার করেছেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের সময় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেত, যা আন্দোলনের বিরুদ্ধে শাজাহান খানের একটি কৌশল হিসেবে দেখা হয়।
শাজাহান খান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগের বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা এবং ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করা হয়েছে যে, অনতিবিলম্বে এ বিষয়ে তদন্ত করে সকল অবৈধ সম্পত্তি জব্দ করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হোক। পরিবহণ খাতের এ ধরনের দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
শাজাহান খানের এ ধরনের কার্যকলাপ সমাজের সামনে পরিবহণ খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতির একটি বড় উদাহরণ তুলে ধরে, যা শ্রমিকদের অধিকার হরণ এবং সাধারণ মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। এজন্য সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের শাস্তির দাবিতে একটি জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
মুক্ত প্রকাশ
প্রতিবেদন: সম্পাদকীয় বিভাগ
0 মন্তব্যসমূহ