জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে আয়োজিত সমাবেশে সহিংসতা ও গুলির ঘটনায় জেলা জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সহিংসতায় একাধিক হতাহতের ঘটনায় মোট ৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে চারটি আদালতে এবং পাঁচটি জয়পুরহাট সদর থানায়। সহিংসতা, গুলি, হামলা এবং ভাঙচুরের অভিযোগে দায়ের করা এসব মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ১,১৯৬ জন।
আওয়ামী লীগ নেতা | ছবিঃ মুক্ত প্রকাশ |
এর মধ্যে রয়েছেন জয়পুরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এবং জয়পুরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সামছুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সদ্য অপসারিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার সাবেক মেয়র, সাতজন সাংবাদিকসহ অন্যান্যরা।
গত ৪ আগস্ট জয়পুরহাট শহরের সার্কিট হাউস মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে আয়োজিত একটি সমাবেশ চলাকালীন সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সমাবেশে যোগ দেওয়া মোরসালিন হোসেন (২০), জয়পুরহাট সদর উপজেলার হালহট্টি গ্রামের মৃত সাজ্জাদ হোসেনের ছেলে, সহিংসতার সময় গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় আরও প্রায় ৯০ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে সাবেক সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও সামছুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল সমাবেশে আগ্নেয়াস্ত্র, ককটেল এবং পেট্রোলবোমা নিয়ে হামলা চালায়। হামলার সময় আসামি হামিম মোল্লার হাতে থাকা শটগান থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছোঁড়া হয়, যার ফলে মোরসালিন গুলিবিদ্ধ হন।
সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা দুটি হত্যা মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, সহিংসতার নির্দেশনা এসেছে উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্ব থেকে। এছাড়া, মামলায় অন্যান্য অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম (বেনু), সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, পৌরসভার সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন কুমার সাহা, জয়পুরহাট মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, পুরাপৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোরশেদ আলী, সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রাসেল দেওয়ান, এবং জেলা পরিষদের সদস্য আবু সাঈদ আল মাহবুব চন্দন।
জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ূন কবির গতকাল শনিবার রাতে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার পর থেকে পুলিশ ও প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎপর রয়েছে। সহিংসতার ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে এবং প্রয়োজনীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রশাসন।
অপরদিকে, অভিযুক্ত নেতৃবৃন্দ তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তারা দাবি করেছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। জয়পুরহাটে বর্তমান রাজনৈতিক উত্তেজনা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রশাসন জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছে।
এমতাবস্থায় জয়পুরহাটের সাধারণ জনগণ ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলো দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, ঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে এবং শহরের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা হবে।
মুক্ত প্রকাশ
প্রতিবেদন: সম্পাদকীয় বিভাগ
0 মন্তব্যসমূহ