নড়াইলে সাবেক এসপি ও ওসির বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি ও হামলার অভিযোগে মামলা

নড়াইলের সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) সাদিরা খাতুন, লোহাগড়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাছির উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি, হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি মঙ্গলবার লোহাগড়া আমলি আদালতে দায়ের করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন নড়াইল জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) মো. আলমগীর সিদ্দিকী।

নড়াইলের সাবেক পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন ও নড়াইলের লোহাগড়া থানার সাবেক ওসি মো. নাছির উদ্দিন ছবিঃ সংগৃহিত 

মামলার বাদী মো. শরিফুল ইসলাম নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের পারশালনগর গ্রামের মো. মনির হোসেনের ছেলে এবং উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তার আইনজীবী মো. রিয়াজুল ইসলাম খান জানান, মামলায় ৩৪ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং কোনো অজ্ঞাত আসামি নেই। 

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আসামিরা বিএনপি নেতাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ও মামলা জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করতেন। চাঁদা না পেয়ে তারা বিএনপি নেতা–কর্মীদের ওপর রাগান্বিত ছিলেন। ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর লোহাগড়া আর্মি ক্যাম্পের সামনে বিএনপির কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে, আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। সাদিরা খাতুনের নির্দেশে হামলাকারীরা বিএনপির নেতা–কর্মীদের কুপিয়ে জখম করে ও বেধড়ক মারধর করে। এ সময় বিএনপি নেতা–কর্মীরা কাজী সুলতানুজ্জামানের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে গিয়ে আসামিরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ২৫-৩০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে, এতে ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং কিছু মালামাল লুট করা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, তখন মামলা করতে গেলে লোহাগড়া থানা মামলা নেয়নি।

মামলার ১ নম্বর আসামি সাবেক এসপি সাদিরা খাতুন বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের দায়িত্বে আছেন এবং ২ নম্বর আসামি লোহাগড়া থানার সাবেক ওসি মো. নাছির উদ্দিন মাগুরার শালিখা থানার ওসি হিসেবে কর্মরত। মামলায় লোহাগড়া থানার সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) হারান চন্দ্র পাল, উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান ও সবুর এবং এএসআই মাজহারুলকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া লোহাগড়া উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুল হাসান, উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর শিকদার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজীব মুসল্লি, লোহাগড়া পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈমুর রহমান এবং লোহাগড়া পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাহামুদুল হাসানসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীদের আসামি করা হয়েছে।

লোহাগড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জি এম নজরুল ইসলাম জানান, ‘আমরা মামলার বিষয়টি জানি না। এ ধরনের মামলা দেওয়া সঠিক হয়নি।’ মামলার ২ নম্বর আসামি সাবেক ওসি মো. নাছির উদ্দিন মামলাটিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেন এবং বলেন, ‘এসপি সাদিরা খাতুন অত্যন্ত সৎ মানুষ। তিনি কারও কাছ থেকে এক কাপ চা–ও খান না। আমি কখনো চাঁদা দাবি করিনি এবং একটি টাকাও নিইনি।’ তিনি আরও জানান, সেদিন বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশের সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। কর্মসূচির পর ছাত্রলীগের কিছু সদস্য মোটরসাইকেলে মহড়া দিয়ে বিএনপি নেতা কাজী সুলতানুজ্জামানের বাড়িতে হামলা চালায়। খবর পেয়ে টহল পুলিশ সেখানে যায় এবং কাউকে পায়নি।

মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলাটি নড়াইলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং পুলিশের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার বিষয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। 

এ ঘটনায় নড়াইলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং জনমনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মামলার পরবর্তী অগ্রগতির ওপর দৃষ্টি রেখেছে সংশ্লিষ্ট মহল।

মুক্ত প্রকাশ

প্রতিবেদন: সম্পাদকীয় বিভাগ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ