সম্প্রতি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে হত্যা মামলা দায়েরের প্রবণতা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সম্পাদক পরিষদ। তারা মনে করছে, এই ধরনের পদক্ষেপ সরকারের স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিশ্রুতির সরাসরি লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে।
আজ শনিবার এক বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদ জানায়, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিশেষভাবে কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ না করে ঢালাওভাবে হত্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে, যা সাংবাদিকতার মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতার প্রতি হুমকি। এই ধরনের মামলাগুলি প্রচলিত আইনের অপব্যবহার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং সাংবাদিকদের কাজ করার স্বাধীনতা সীমিত করছে।
সম্পাদক পরিষদ বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে যে, সাংবাদিকরা যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন, তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে, নীতিবিবর্জিত ও লেজুড়বৃত্তির সাংবাদিকতা সম্পূর্ণভাবে বর্জনীয়। যারা বিগত সরকারের সময়ে দমনমূলক কার্যক্রমে সাংবাদিকতার নামে সমর্থন দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রেস কাউন্সিল একটি কমিটি গঠন করে তদন্ত চালাতে পারে। দোষী সাব্যস্ত হলে, প্রেস কাউন্সিল আইনে তাদের শাস্তি প্রদান করতে পারে এবং অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে প্রেস কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রচলিত আইনের আওতায় বিচার চলতে পারে।
বিগত সরকারের সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ)-এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টা বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল। এই আইনগুলো সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিতর্কিত ছিল এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো তা নিন্দা জানায়। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ক্রমাগতভাবে হত্যা মামলার প্রবণতা গ্রহণ করার কারণে সরকারের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
সম্পাদক পরিষদ সরকারকে আহ্বান জানায়, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ না পাওয়া গেলে দ্রুত এসব মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া উচিত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করে শুধু তাদের স্বাধীনতার ওপরই নয়, সরকারের সম্মানিত ভাবমূর্তির ওপরও আঘাত করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে, সরকারের উচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করা এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া না গেলে তাদের নির্দোষ ঘোষণা করে মামলা থেকে মুক্তি দেওয়া। এটি শুধু সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে না, বরং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের ভাবমূর্তি উন্নত করবে।
মুক্ত প্রকাশ
প্রতিবেদন: সম্পাদকীয় বিভাগ
0 মন্তব্যসমূহ