আবহাওয়া, কৃত্রিম টার্ফ এবং ফিটনেস নিয়ে চিন্তিত বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল

আগামী ৫ এবং ৮ সেপ্টেম্বর ভুটানের বিপক্ষে দুটি ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। কিন্তু ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে আসার চার দিন পরও আবহাওয়া, পরিবেশ এবং চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামের কৃত্রিম টার্ফের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না তারা। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে খেলোয়াড়রা। দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া এবং ডিফেন্ডার রহমত মিয়া তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন, যা প্রমাণ করে যে দলের প্রস্তুতি এখনো যথাযথভাবে এগোচ্ছে না।

ভুটানে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল | ছবিঃ BFF 

বাংলাদেশ দল বর্তমানে মানসিক এবং শারীরিক প্রস্তুতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। থিম্পুর উচ্চতা এবং শীতল আবহাওয়া খেলোয়াড়দের শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর প্রভাব ফেলছে, যা তাদের স্বাভাবিক খেলার ধারাকে ব্যাহত করছে। মিডফিল্ডার সোহেল রানা এই সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, "আমরা শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছি। ভুটানের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে আমরা হাতে থাকা বাকি দুই দিন এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছি।"

চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামের কৃত্রিম টার্ফও বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কৃত্রিম টার্ফের গতি এবং বলের বাউন্সের তারতম্যের কারণে খেলার পরিকল্পনা এবং বলের নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হচ্ছে। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া জানান, "মাঠের পিচ খুব দ্রুত এবং বিল্ড-আপ প্লেতে সমস্যা হচ্ছে। এক বা দুই দিন আরও প্রয়োজন মাঠের সঙ্গে মানিয়ে নিতে।" 

কোচিং স্টাফ খেলোয়াড়দের টার্ফের গতি এবং বলের গতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে বিশেষ অনুশীলন করাচ্ছে। এমনকি সুনির্দিষ্ট অনুশীলনের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের বলের নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রুততার সঙ্গে খেলতে শেখানো হচ্ছে। তবে, কৃত্রিম টার্ফে খেলার অভিজ্ঞতা না থাকায় দলের মধ্যে এখনো কিছুটা অস্বস্তি বিরাজ করছে।

দীর্ঘ তিন মাসের বিরতির পর খেলোয়াড়রা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন, যার ফলে তাদের ফিটনেস এখনো আশানুরূপ অবস্থায় নেই। ডিফেন্ডার রহমত মিয়া বলেন, "দলের ফিটনেস এখনো পূর্ণমাত্রায় ফিরে আসেনি। সকল খেলোয়াড়ই তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে আবহাওয়া, পরিবেশ এবং কৃত্রিম টার্ফের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য।" দলের খেলোয়াড়দের ফিটনেস পুনরুদ্ধারের জন্য কোচিং স্টাফ বিশেষ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করেছে। টিমের ফিজিও এবং ট্রেনাররা খেলোয়াড়দের ফিটনেস বাড়ানোর জন্য তাদের ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণ এবং বিশ্রামের সময়কে নির্ধারণ করছে।

বাংলাদেশ দলের কোচিং স্টাফ কৌশলগত প্রস্তুতির ওপর জোর দিচ্ছে, বিশেষ করে কিভাবে ভুটানের আক্রমণ মোকাবিলা করতে হবে এবং পাল্টা আক্রমণ করতে হবে সে বিষয়ে। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেন, "ভুটানের খেলোয়াড়রা তাদের মৌসুমের মধ্যেই রয়েছে, ফলে তারা আমাদের চেয়ে ফিট। আমরা কিভাবে তাদের আক্রমণ সামলাবো এবং পাল্টা আক্রমণ করবো তা নিয়ে কৌশলগত আলোচনা করছি।" দলের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিপক্ষের ফিটনেস এবং তাদের মাঠের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সুবিধাকে মোকাবিলা করা।

দলের প্রস্তুতি ও মানিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া আগামী দুই দিনে তাদের পারফরম্যান্সে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও ভুটান বর্তমানে তাদের সেরা ফর্মে রয়েছে, বাংলাদেশ দল আশাবাদী যে তারা শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারবে। 

এই ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচগুলো বাংলাদেশের জন্য শুধুমাত্র একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরীক্ষা নয়, বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভিন্ন পরিবেশে খেলার মানসিক এবং শারীরিক প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ। ম্যাচগুলো থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে দলের পারফরম্যান্সে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের অবস্থানকে আরও সুসংহত করবে।

এই প্রতিবেদনটি প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ দলের সামনে একাধিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে সঠিক প্রস্তুতি ও মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার মাধ্যমে দলটি তাদের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারে।

মুক্ত প্রকাশ

প্রতিবেদন: ক্রীড়া বিভাগ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ