ঢাকায় ছয় ঘণ্টা অবরোধ, কারিগরি শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবিতে নগরজীবনে অচলাবস্থা

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের সাতরাস্তা এলাকায় আজ সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ছয় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে কারিগরি শিক্ষার্থীরা, যার ফলে রাজধানীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপসহকারী প্রকৌশলী পদ শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য নির্দিষ্ট করার দাবিসহ আরও কয়েকটি দাবিতে এই অবরোধ করে।

 রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের সাতরাস্তা এলাকায় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে সৃষ্ট যানজট ছবিঃ মুক্ত প্রকাশ

অবরোধের কারণে মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত ঢাকা শহরের প্রধান সড়কগুলো স্থবির হয়ে পড়ে। বিজয় সরণি উড়ালসড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, এবং সাতরাস্তা ও এর আশপাশের সড়কগুলোতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়। বিভিন্ন এলাকার মানুষকে দীর্ঘ সময় ধরে যানজটে আটকে থাকতে হয়, যার ফলে নগরবাসীর ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। বিকেল চারটার পরও অবরোধ চলতে থাকায় অফিস শেষে ঘরমুখী মানুষদের জন্য ঘরে ফেরা কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। অনেকেই বাধ্য হয়ে কর্মস্থল থেকে হেঁটে বাসার উদ্দেশে রওনা দেন।

সাতরাস্তা এলাকায় যানজটে আটকে পড়া গাড়িচালকদের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে কয়েকজন চালককে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তীব্র বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। মো. জামাল নামের একজন প্রাইভেট কারচালক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জরুরি কাজে মহাখালী থেকে রমনার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন; কিন্তু দুপুর ১২টা থেকে তিনি সাতরাস্তার কাছে এসে আটকে যান। পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকার পরেও শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করলেও তাঁরা কর্ণপাত করেননি। আরেক প্রাইভেট কারচালক আবদুল মান্নান বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান।

অবরোধরত শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে অন্যতম হলো ২০২১ সালের বিতর্কিত নিয়োগপ্রাপ্ত সব ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের কারিগরি অধিদপ্তর এবং প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দ্রুত স্থানান্তর করা। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সকে চার বছর মেয়াদি করা এবং প্রতিটি সেমিস্টার ছয় মাস মেয়াদি করতে হবে। উপসহকারী প্রকৌশলী (১০ম গ্রেড) পদ শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে এবং অন্য কেউ যেন এ পদে আবেদন করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সংস্কার করে এ সেক্টর পরিচালনায় কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত কোনো জনবল রাখা যাবে না। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে সব শূন্য পদে কারিগরি জনবল নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষকসংকট দূর করতে হবে। উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রছাত্রীদের জন্য শতভাগ আসন নিশ্চিত করার দাবিও জানানো হয়।

অবরোধরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল বলেন, "কারিগরি শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এবং এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা বাধ্য হয়ে অবরোধের পথে নেমেছি।" আশরাফুল আরও জানান, "সরকারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস না পেলে তাঁরা সড়ক ছেড়ে যাবেন না।"

পরে সন্ধ্যা ছয়টার পর সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস পাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে যান। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গাজী শামীমুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, "সরকারের আশ্বাস পেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন, এবং এরপর থেকে রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।"

আজকের এ অবরোধ নগরজীবনে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করে। নগরবাসী আশা করছেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর দ্রুত এবং যথাযথ সমাধান হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অবস্থার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। শিক্ষার্থীরাও তাদের দাবি বাস্তবায়নের ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ দেখতে চান, যাতে তাদের শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবনে কোনো বাধা না থাকে।

মুক্ত প্রকাশ

প্রতিবেদন: সম্পাদকীয় বিভাগ 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ