ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন ভোটারদের ভিন্নমত ও ভবিষ্যৎ ভাবনা

ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো ইউক্রেন যুদ্ধ। তবে এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মার্কিন জনমতে স্পষ্ট বিভাজন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও দেশটির নীতিনির্ধারকদের জন্য ইউক্রেন যুদ্ধ শীর্ষ অগ্রাধিকার, সাধারণ মার্কিন ভোটারদের তালিকায় এটি শীর্ষে নেই। ভোটারদের দৃষ্টিভঙ্গি একদিকে রাজনৈতিক মতাদর্শ, অন্যদিকে দেশের স্বার্থে যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসছবিঃ সংগৃহিত 

জুলাই মাসে পিউ রিসার্চ সেন্টারের করা এক জরিপে দেখা গেছে, তিন ভাগের এক ভাগ মার্কিন নাগরিক মনে করেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য গুরুতর হুমকি। তবে এই সংখ্যা যুদ্ধের শুরুতে অনেক বেশি ছিল। বর্তমানে ডেমোক্র্যাটদের ৪৫ শতাংশ এই আগ্রাসনকে বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করলেও, রিপাবলিকানদের মধ্যে মাত্র ২৬ শতাংশ মনে করছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুতর সমস্যা।

ইউক্রেনকে রক্ষা করা যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব কি না—এ প্রশ্নটি ভোটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। পিউ রিসার্চের জরিপে দেখা যায়, ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ বিশ্বাস করেন, ইউক্রেনকে রক্ষা করার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যদিকে, রিপাবলিকানদের মধ্যে ৬২ শতাংশ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের কোনো দায়িত্ব নেই। 

এই মতবিরোধ শুধু ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি সমর্থনের প্রশ্নে নয়, বরং মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের রাজনৈতিক বিভাজনের প্রতিফলন।

মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা যায়, ডেমোক্র্যাটদের ৬৩ শতাংশ মনে করেন যত দিন প্রয়োজন, তত দিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনকে সমর্থন করে যেতে হবে। অন্যদিকে, রিপাবলিকানদের মধ্যে মাত্র ৩৭ শতাংশ এই মতের পক্ষে। রিপাবলিকানদের বড় একটি অংশ মনে করেন, ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার পরিমাণ ইতোমধ্যে অনেক বেশি এবং এটি বন্ধ করা উচিত।

এই বিভাজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থীদের অবস্থানেও প্রতিফলিত হয়েছে। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস যুদ্ধ অবসানে ইউক্রেনকে সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন এবং এই ইস্যুতে ইউরোপীয় মিত্রদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, যেকোনো শান্তিচুক্তিতে ইউক্রেনকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

অন্যদিকে, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে দ্রুত ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন, যদিও তিনি কীভাবে তা করবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। ট্রাম্প ইউক্রেনকে সহায়তা করার সমালোচনা করেছেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসা করেছেন। 

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন রাজনীতি ও জনমতে বিভাজন রয়েছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এটি প্রধান ইস্যু হিসেবে আবির্ভূত হবে না। মার্কিন ভোটারদের মধ্যে পররাষ্ট্র নীতির অন্যান্য বিষয়, যেমন ইসরায়েল-হামাস সংঘাত, চীনের সাথে সম্পর্ক এবং সন্ত্রাসবাদের মতো ইস্যুগুলি ইউক্রেন যুদ্ধের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন ভোটারদের ভিন্নমত দেশটির রাজনীতির এক জটিল বাস্তবতা। যদিও ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলই ইউক্রেনকে সমর্থন জানিয়েছে, যুদ্ধের প্রভাব, যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং ভবিষ্যতের পদক্ষেপ নিয়ে তাদের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য রয়ে গেছে।

মুক্ত প্রকাশ

প্রতিবেদন: আন্তর্জাতিক ডেস্ক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ