বাজারে লাগামহীন সবজির দাম, কাঁচা মরিচের কেজি ৫০০ টাকা!

সম্প্রতি দেশের সবজির বাজারে দামের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি সাধারণ ক্রেতাদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা সবজির দাম এখন এক অনিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে পৌঁছেছে। ময়মনসিংহের ত্রিশালসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বেশিরভাগ সবজি এখন কেজি প্রতি ১০০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি উৎপাদন এলাকাগুলোতেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। সরবরাহ সংকট, বন্যার প্রভাব এবং আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে এই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ক্রেতারা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বাজারে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজি কিনতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

 কাঁচা বাজার ছবিঃ সংগৃহিত

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সবজির দাম কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। বিশেষ করে বরবটি, করলা, বেগুন, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল এবং লাউসহ অন্যান্য মৌসুমি সবজি অত্যধিক দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে উপস্থিত বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বন্যার কারণে সবজির উৎপাদন কমে যাওয়ায় এই দাম বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, পরিবহন সংকট এবং উৎপাদন এলাকা থেকে সবজি সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটায় বাজারে সবজির সরবরাহও কমে গেছে। এতে দামের ওপর চাপ আরও বেড়েছে।

যদিও বেশিরভাগ সবজির দাম ১০০ টাকার উপরে, তবে কিছু সবজি এখনো কেজি প্রতি ১০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে পেঁপে, মুলা, ঢেরস এবং মুখি। ত্রিশালের বাজারে পেঁপে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, মুলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেরস ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং মুখি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, এসব সবজি তুলনামূলকভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এগুলোর দাম এখনো কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে অন্যান্য সবজির মতো এগুলোর দামও যে কোনো সময় বাড়তে পারে।

সবজির বাজারে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো কাঁচা মরিচের দাম। বর্তমানে কাঁচা মরিচ কেজি প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের মতে, কিছুদিন আগেও কাঁচা মরিচের দাম ছিল অনেক কম, কিন্তু বৃষ্টি এবং বন্যার কারণে উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকায় মরিচের ফসল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে এর দাম আকাশছোঁয়া পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিক্রেতারা জানান, সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই দামের আর কোনো হ্রাস হওয়ার সম্ভাবনা নেই। 

ত্রিশালের মতো দেশের অন্যান্য উৎপাদন এলাকাগুলোতেও সবজির দাম ক্রমাগত বাড়ছে। বাজার কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকায় বন্যার কারণে ক্ষেতের সবজি নষ্ট হয়ে গেছে, যার ফলে উৎপাদন কমেছে। সরবরাহ সংকটের কারণে উৎপাদন এলাকাগুলোর কৃষকরা তুলনামূলক বেশি দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। শুধু উৎপাদন কম হওয়া নয়, ক্ষেতের ফসল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

ত্রিশাল বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। তারা জানান, সরবরাহে ঘাটতি এবং পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা বেশি দামে সবজি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন, যা ক্রেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। ক্রেতারা এই দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের বর্তমান জলবায়ু পরিস্থিতি এবং সরবরাহ ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় সবজির উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এছাড়াও, সবজি সংরক্ষণ এবং পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্তভাবে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, দেশের খাদ্য উৎপাদন এবং সরবরাহ ব্যবস্থা সঠিকভাবে কার্যকর করতে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো এবং সরবরাহ শৃঙ্খলা উন্নত করা প্রয়োজন। 

এমন অবস্থায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে হবে। এছাড়া, উৎপাদন এলাকায় কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান এবং ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, ভবিষ্যতে আরও বড় খাদ্য সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। 

মোটকথা, দেশের বিভিন্ন বাজারে সবজির মূল্যবৃদ্ধি শুধু একটি সাময়িক সমস্যা নয়, বরং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকতে পারে। ক্রেতারা স্বস্তি পেতে বাজার স্থিতিশীল করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রত্যাশা করছেন। 

মুক্ত প্রকাশ

প্রতিবেদন: সম্পাদকীয় বিভাগ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ