বাংলাদেশের নারী ফুটবলের ইতিহাসে আরেকটি উজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছে সাবিনা খাতুনের দল। টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের মাধ্যমে তারা কেবল বাংলাদেশের গৌরবই বাড়ায়নি, বরং গোটা বিশ্বে নারী ফুটবলে একটি শক্তিশালী অবস্থান প্রতিষ্ঠা করেছে। এই গৌরবময় সাফল্যের অন্যতম কারিগর হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের তিন ফুটবলার – স্বপ্না রানী, নকোয়াতি কিসকো, ও সাগরিকা নিজের জায়গা করে নিয়েছেন লাখো মানুষের হৃদয়ে।
স্বপ্না, নকোয়াতি ও সাগরিকা | ছবিঃ মুক্ত প্রকাশ |
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে মাটির কুঁড়েঘরে বেড়ে ওঠা স্বপ্না, নকোয়াতি ও সাগরিকার জীবনের শুরুটা ছিল সংগ্রামমুখর। দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা এই মেয়েরা অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আজকের এই সাফল্য অর্জন করেছেন। তাদের ফুটবলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ মনোভাব, কঠোর অনুশীলন এবং দৃঢ়সংকল্পের ফলস্বরূপ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তারা আলো ছড়িয়েছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।
২০২২ সালে প্রথমবারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিলো বাংলাদেশ, যা ছিল বাংলাদেশের নারীদের জন্য ইতিহাস গড়া একটি মুহূর্ত। নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সেই ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের স্বাদ পায় বাংলার মেয়েরা। আর এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে সদ্য সমাপ্ত সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে পুনরায় নেপালকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে বাংলাদেশের নারী দল। এবার ২-১ গোলের ব্যবধানে হিমালয়ের দেশে লাল-সবুজের পতাকা উড়ায় বাংলাদেশ, যা তাদের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এক নতুন মাইলফলক।
স্বপ্না, নকোয়াতি ও সাগরিকার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিলো রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামের এক ক্ষুদ্র ফুটবল একাডেমি থেকে। অনুপ্রেরণা ও সংকল্পের অভাব থাকলেও, তাদের এগিয়ে যাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষাই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। কঠিন বাস্তবতা, দারিদ্র্য এবং সামাজিক বাধা-বিপত্তিকে জয় করে তারা নিজেদেরকে দেশের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই তিন ফুটবলারের অর্জন নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী এবং তাদের সাফল্য দেশের নারী ফুটবলকেও নিয়ে যাচ্ছে এক নতুন উচ্চতায়।
এই তিনজনই আজ কেবল ঠাকুরগাঁওয়ের গর্ব নয়, বরং সমগ্র দেশের নারী ফুটবলের উজ্জ্বল বিজ্ঞাপন হয়ে উঠেছেন। তাদের সাফল্যের গল্প প্রতিটি বাঙালি মেয়েকে প্রেরণা জোগায় এবং দেখিয়ে দেয় যে সংকল্প আর সাহস থাকলে কঠিন পরিস্থিতিতেও সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানো সম্ভব।
মুক্ত প্রকাশ
প্রতিবেদন: ক্রীড়া বিভাগ
0 মন্তব্যসমূহ